প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল হলো প্রজাতন্ত্রের কোন বিষয় অথবা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় উদ্ভূত বিষয় নিষ্পত্তি বা বিচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সালিস-সভা। সরকারী প্রতিষ্ঠান বা আধাসরকারী প্রতিঠানের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, চাকরীর মেয়াদ,বাসা সহ অনান্য কোন বিষয় বিরোদ্ধ দেখা দিলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়ের করে তা নিষ্পত্তির করা যায়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলি, সরকারি বাসা,বেতন-ভাতা, ও পেনশন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য সরকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। তাই এ সকল বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য অবশ্যই প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল যেতে হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য রয়েছে ইন্টার-স্টেট কমার্স কমিশন এবং ফেডারেল ট্রেড কমিশন । ফ্রান্সেই জন্য রয়েছে কাউন্সিল অব স্টেট সিস্টেম। ভারত উপমহাদেশেও বিটিশদের শাসন আমলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গড়ে উঠেছিল। ১৯৪৭ সালের ক্রাউন প্রসিডিংস অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ সব ট্রাইব্যুনালের আওতায় ছিল সাধারণত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয়, যেমন সামাজিক নিরাপত্তা, শিশুসদনের নিবন্ধন, স্থানীয় কর ব্যবস্থা ইত্যাদি।
কে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবে
সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিযুক্ত সকল কর্মচারী ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি সংস্থায় যারা কর্মে নিযুক্ত আছেন তাদের চাকরির মেয়াদ, শর্তাবলি, সরকারি বাসা, বেতন-ভাতা,ও পেনশন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবে।
কে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবে না
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থায় নিযুক্ত কোন ব্যক্তি এবং বর্ডার বাংলাদেশে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারবে না।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী
প্রজাতন্ত্রের কর্মে বা কোন সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত সরকারী কর্মচারী এবং এর মধ্যে এমন কোনও ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যিনি অবসরপ্রাপ্ত বা অবসরপ্রাপ্ত, বরখাস্ত, অপসারণ বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত, বা এইরকম চাকরি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত, তবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগে এবং বর্ডার বাংলাদেশে নিযুক্ত কোনও ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেন না।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের এখ্তিয়ার
ক) প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির পেনশনের অধিকার সহ তার কর্মের শর্তাবলি বা প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে তৎসম্পর্কে গৃহীত কোন ব্যবস্থার উপর পেশকৃত আবেদনের শুনানি গ্ৰহন ও নিস্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার থাকবে।
খ) প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত যে কোন ব্যক্তির পেনশনের অধিকার সহ তার কর্মের শর্তাবলি বা প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে সেসম্পকে গৃহীত কোন ব্যবস্থার দ্বারা কোন ব্যক্তি সংক্ষুদ্ধ হলে এই ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
গ) প্রজাতন্ত্রের বা বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মের শর্তাবলী কিংবা উক্ত কর্মের শৃঙ্খলা সম্পর্কে আপাতত বলবৎ কোন আইনের অধীনে উচ্চতর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের যে আদেশ, সিদ্ধান্ত বা কোন ব্যাবস্থা বাতিল, রদবদল কিংবা সংশোধন করতে পারেন তাহার উপরে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন না করা পর্যন্ত প্রসাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা যাবে না।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সময়সীমা
কর্তৃপক্ষের আদেশ, সিদ্ধান্ত বা কোন ব্যাবস্থা গ্রহন বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের তারিখ হয়তে ৬ মাস এর ভিতরে পেশ করা না হলে প্রসাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মামলা গৃহিত হয়বে না ।
ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
একটি ট্রাইব্যুনালে প্রতিটি আবেদন লিখিত হতে হবে। একটি আবেদনে নিম্নলিখিত বিবরণগুলি থাকতে হবে : যথা-
১। যে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করবেন সেই ট্রাইব্যুনালে নাম।
২। আবেদনকারীর নাম, বিবরণ এবং ঠিকানা।
৩। বিবাদী পক্ষের নাম, বিবরণ এবং ঠিকানা।
৪। কোন ঘটনাটির কার্য কারনে মামলা দায়ের করা হবে তার বর্ননা ।
৫।যে কারণে আবেদনটি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার রয়েছে তার বর্ননা ।
৬।আবেদনকারী দাবি ।
৭।আবেদনকারী নির্ভর করতে ইচ্ছুক যে কোনও বিষয়।
৮। আবেদনটি আবেদনকারীর স্বাক্ষর সহ আবেদনের সাথে সংযুক্ত ২০ (বিশ) টাকার কোর্ট ফি দিতে হবে।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার পর পরবর্তী প্রক্রিয়া
১ম ধাপঃ–বিবাদী পক্ষকে নোটিশ প্রদান।
ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার পরে ট্রাইব্যুনাল বিবাদী পক্ষকে একটি লিখিত জবাব দাখিলের জন্য একটি নোটিশ প্রদান করবেন। লিখিত বিবৃতিটির একটি অনুলিপি নিবন্ধিত পোস্টের মাধ্যমে আবেদনকারীর কাছে প্রেরণ করা হবে।
২য় ধাপঃ–আবেদন নিষ্পত্তি করার পদ্ধতি
বিবাদী পক্ষের লিখিত বিবৃতি জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত মেয়াদ শেষের পনের দিন পরে ট্রাইব্যুনাল আবেদন শুনানির জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন। ট্রাইব্যুনাল শুনানির তারিখে ট্রাইব্যুনালে উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ উপস্থিত থাকতে হবে।
যেখানে শুনানির জন্য নির্ধারণ দিনটিতে উভয় পক্ষই উপস্থিত হবে না এবং নোটিশটি সঠিকভাবে জারি করা হয়েছে তখন ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি খারিজ করতে পারেন। যদি আবেদনকারী উপস্থিত হয় তবে অন্য পক্ষ উপস্থিত না হয়, ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি একতরফা নিতে পারবেন । অন্যদিকে, যদি বিবাদী পক্ষ উপস্থিত হয় তবে আবেদনকারী উপস্থিত না হন, ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি খারিজ করে দিতে পারবেন।
৩য় ধাপঃ সিদ্ধান্ত
আবেদনটি শুনানি হওয়ার পরে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী তারিখে লিখিতভাবে তার সিদ্ধান্ত দেবেন।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল
এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল আক্টে, ১৯৮০ একটি প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনালেরও বিধান রাখা হয়েছে। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন চেয়ারম্যান ও অপর দুজন সদস্য নিয়ে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে। নিয়োগের জন্য চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও এ আইনে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান হবেন এমন এক ব্যক্তি যিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বা বিচারক হওয়ার যোগ্য অথবা প্রজাতন্ত্রে কর্মরত এমন একজন কর্মকর্তা যার পদমর্যাদা সরকারের অতিরিক্ত সচিবের নিচে নয়। অপর দুজন সদস্যের মধ্যে একজন হবেন এমন ব্যক্তি যিনি প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত এবং যার পদমর্যাদা যুগ্মসচিবের নিচে নয়। অপর সদস্য হবেন একজন জেলা জজ। নিয়োগের শর্তাবলি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে। প্রশাসনিক আপীল ট্রাইব্যুনাল সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের এখ্তিয়ার
এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল আক্টে, ১৯৮০ এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের কোন আদেশ বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আপীল শুনানী এবং সিদ্ধান্ত প্রদানের বিষয় আপীল ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারভুক্ত। কোন ব্যক্তি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন আদেশ বা সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে এ ধরনের আদেশ বা সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে আপীল দাখিল করার সুযোগ পাবেন। আপীল ট্রাইব্যুনাল প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের যেকোন আদেশ বা সিদ্ধান্ত বহাল রাখা, বাতিল, দ্বিমত পোষণ অথবা পরিবর্তন করতে পারেন। আপীল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত আদেশই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়েরের সময়সীমা
এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল আক্টে, ১৯৮০ এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন আদেশ বা সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে এ ধরনের আদেশ বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার দিন থেকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আপীল দাখিল করার সুযোগ পাবেন।
আপিলকারী যদি প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে এই মর্মে পরিতুষ্ট করতে পারেন যে, তিন মাসের মধ্যে আপীল দাখিল করতে না পারার যথেষ্ট কারন রহিয়াছে তাহলে তিন মাস সময়সীমা পার হয়ার পরেও আপিল করতে পারবে কিন্তু ছয় মাসের বেশি হবে না।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যাদি
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং কার্যাদি নিম্নরূপ:
১। যে কোনও ব্যক্তির উপস্থিতি তলব করা ।
২।শপথের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা।
৩। কোন নথি উদ্ঘাটন করা।
৪। প্রয়োজনীয় নথি হলফনামা সহ গ্রহন করা।
৫। সাক্ষী বা দলিলপত্র পরীক্ষা করার জন্য কমিশন প্রদান ।
৬। ট্রাইব্যুনালের সামনে যে কোনও কার্যক্রম বিচার বিভাগীয় কার্য বলে গণ্য হবে।
৭।প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের মধ্যে কোনও মতপার্থক্য থাকলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে
৮। একটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সরকার যে স্থানে স্থাপন করার প্রয়োজন মনে করবে ঠিক তেমন স্থানে স্থাপন করতে পারবে।
৯। চেয়ারম্যান বা প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের অন্য কোনও সদস্য যদি কোনও শুনানির সময় অংশ নিতে না পারেন তবে অন্যান্য সদস্যদের সামনে শুনানি চলতে পারে।
১০। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল অন্য কোন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যে কোন পর্যায়ে যে কোন মামলা বদলী করার জন্য লিখিতভাবে আদেশ দিতে পারে।
১১। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচনায় এ সকল ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন।
If you want to know more about please click: Administrative Tribunal Laws in Bangladesh.
সিএলপি কর্তৃক প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কিত আইনী সেবা 2022:
সিএলপি একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার যেখানে ব্যারিস্টারস, অ্যাডভোকেটস এবং আইনজীবীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কিত সকল আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-ই-মেইল: info@counselslaw.com,
ফোন: +8801700920980 +8801947470606, ঠিকানা: বাড়ি-৩৯, রোড- ১২৬ (তৃতীয় তল) ইসলাম ম্যানশন, গুলশান ১, ঢাকা।