ভূমিকা
কোম্পানির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের আইনের প্রতিপালন করতে হয় তার মধ্যে প্রতিটি লিমিটেড কোম্পানির জন্য প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক । নতুন কোম্পানীগুলো আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিষয় সঠিক ধারনা না থাকার কারনে অনেক ধরনের সমস্যার সন্মুখিন হতে হয় । যেমন আয়কর রিটার্ন কখন দাখিল করতে হয় , কোথায় দাখিল করতে হয়, কি পরিমান আয়কর প্রদান করতে হয়, এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিলের আদ্যোপান্ত নিচে আলোচনা করা হলো।
কোম্পানির আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতিঃ কোম্পানির আয়কর রিটার্ন কখন দাখিল করতে হয়
কোম্পানির আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ভর করে, কোম্পানির আয় বছরের শেষ তারিখের উপর ভিত্তি কর তবে ক্যালেন্ডার বছর শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান রয়েছে সেই হিসেবে কোম্পানির জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় হল ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত । তবে দুবার সময়ের আবেদন করে এই সময় সর্বোচ্চ ১৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা যায়। প্রতিটি কোম্পানিকে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। অন্যথায় উক্ত কোম্পানিকে আর্থিক জরমানা গুনতে হবে।
কোম্পানির যে সকল ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়
কোম্পানি আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নিম্নোক্ত দলিলাদি জমা দিতে হবে।
- অডিট রিপোর্ট ।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ।
- লোন বা ব্যাংক ঋণের তথ্য (যদি থাকে)।
- সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যদি কোনো পণ্য বা সেবা সরবারহ করে থাকে সেক্ষেত্রে উৎসে করের সনদ ও চালানের কপি।
- ট্রেড লাইসেন্সের কপি ।
- আয়কর প্রদানের পে-অডার বা চালানের কপি।
- এছাড়াও সেসব তথ্যাদি যা কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সেসব দলিলাদি অবশ্যই ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হবে।
কোম্পানির অডিট রিপোর্ট
কোম্পানীর আয়কর রিটার্ন দাখিল করার আগে যে কাজ সব থেকে গুরুত্বপূর্ন তা হলো অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করা। অডিট রিপোর্ট ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায় না। এছাড়াও আপনার কোম্পানীর কত আয়কর দিতে হবে সেটাও নির্ধারন হয় অডিট রিপোর্ট এর উপর । অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করার জন্য আপনার কোম্পানীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার কোম্পানীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিয়ে চার্টার্ডঅ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম একটি ইনকাম স্টেটমেন্ট, ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট, ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট এবং একটি ব্যালেন্স শিট প্রস্তুত করবে। এগুলোকে সংক্ষেপে অডিট রিপোর্ট বলা হয়। উক্ত অডিট রিপোর্ট একজন স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দ্বার স্বাক্ষর করাতে হবে। মনে রাখা ভাল আপনার কোম্পানীর অডিট রিপোর্ট যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম প্রস্তুত করছে সেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর তালিকা ভূক্ত হতে হবে। এর বাহিরে অন্য কোন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম অডিট রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারবে না ।
কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট
কোম্পানির ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। তাই কোম্পানি গঠন করার পর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো অযাচিত লেনদেন না হয়। কোম্পানির যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সমগ্র লেনদেন পরিচালিত হবে। যেমন, কোম্পানির কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, বাড়ি ভাড়া, পরিচালকদের সম্মানী ভাতা ইত্যাদি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে। এছাড়া যে কোনো বিল, ভাড়া, বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচের ক্ষেত্রে অবশ্যই আয়কর আইন ও ভ্যাট আইনের আলোকে ট্যাক্স ও ভ্যাট কর্তন করতে হবে।
কোম্পানির আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করা
অডিট রিপোর্ট তৈরী করা হলে উক্ত অডিট রিপোর্ট সহ কোম্পানীর প্রয়োজনীর কাগজপত্র সহ একজন ভাল আয়কর আইনজীবীকে প্রদান করতে হবে। আয়কর আইনজীবী উক্ত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে কোম্পানীর কত আয়কর প্রদান করতে হবে তা হিসাব করবেন। আয়কর আইনজীবী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত কোম্পানির আয়কর রিটার্ন ফরম আছে উক্ত ফরমটি নির্ভুলভাবে পূরুন করে সম্পূর্ন আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করবেন।
কোম্পানীর কর হার
আয়কর পরিপত্র এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রতি বছর কোম্পানীর কর হার প্রকাশ করে থাকে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট কার্যক্রমের মাধ্যমে নিম্নক্ত কোম্পানীর আয়কর নির্ধারন করা হয়। প্রতি অর্থ বছরে কোম্পানীর কর হার পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।
কোম্পানীর বর্ননা | প্রযোজ্য কর হার | শর্ত পরিপালনের ব্যর্থতায় প্রস্তাবিত কর হার |
পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানী যাদের পরিশোধিত মূল্ধনের ১০% অধিক শেয়ার IPO
( Initial Public Offering) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে । |
২০% | ২২.৫% |
পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানী যাদের পরিশোধিত মূল্ধনের ১০% বা ১০% কম শেয়ার IPO
( Initial Public Offering) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে । |
২২.৫% | ২৫% |
পাবলিক ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানী | ২৭.৫% | ৩০% |
এক ব্যক্তি কোম্পানী | ২২.৫% | ২৫% |
পাবলিক ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা,আর্থিক প্রতিষ্ঠান। | ৩৭.৫% | – |
পাবলিক ট্রেডেড নয় ব্যাংক, বীমা,আর্থিক প্রতিষ্ঠান। | ৪০% | – |
সিগারেট,বিড়ি,জর্দা,গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পন্য প্রস্তুতকারী কোম্পানী | ৪৫%+২.৫% সারচার্জ | – |
পাবলিক ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী | ৪০% | – |
পাবলিক ট্রেডেড নয় মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী | ৪৫% | – |
কোম্পানির পে–অডার
কোম্পানীর কত আয়কর প্রদান করতে হবে তা আয়কর আইনজীবী হিসাব করার পর সংশ্লিষ্ট কর সার্কেল অনুকুলে পে-অডার এর মাধ্যমে কোম্পানীর আয়কর প্রদান করতে হবে। কোম্পানী একই আর্থিক বছরের মধ্যে কোন প্রকার কর প্রদান করে থাকলে সেই টাকা বাদ দিয়ে পে-অডার করতে হবে। আয়কর রিটার্ন দাখিল এর সময় পে-অডার প্রদান করতে হবে।
কোথায় কোম্পানির আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন
আপনার কোম্পানীর আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত হলে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সহ উক্ত আয়কর রিটার্ন আপনার কোম্পানীর টি আই এন উল্লেখিত নির্ধারিত কর সার্কেলে জমা প্রদান করতে হবে।
প্রাপ্তি স্বীকার এবং ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট
আয়কর রিটার্ন প্রদানের পরে উক্ত কর সার্কেল আপনাকে একটি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ প্রদান করবে। প্রয়োজন হলে উক্ত কর সার্কেল থেকে আপনার কোম্পানীর ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট নিতে পারবেন।
সিএলপি কর্তৃক আয়কর বিষয়ে সেবা প্রদান
সিএলপি একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার এখানে ব্যারিস্টারস ও আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমে কোম্পানীর আয়কর ও ব্যাক্তি আয়কর সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। আয়কর বিষয়ে কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-ই-মেইল: info@counselslaw.com ফোন: +8801700920980 +8801947470606, ঠিকানা: জামিলা ভিলা, ফ্ল্যাটঃ সি-২, বাসা-৪/এ/১ (তৃতীয় তল), রোড-০২, গুলশান- ১, ঢাকা-১২১২।