ভূমিকা
দেওয়ানী আদালতে যে সকল মামলা দায়ের করা হয় তার অধিকাংশ মামলা হলো ঘোষনামূলক মামলা। অনেক ক্ষেত্রে এই মামলা ত্রুটিপূর্ন হয়ার কারণে কাঙ্খিত প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। যার কারণে সময়, অর্থ ও হয়রানি বাড়ে । তাই ঘোষনামূলক মামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন তাহলে এক দিকে যেমন কাঙ্খিত প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হবে অন্য দিকে সময় ও অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। তাই আসুন জেনে নেই ঘোষনামূলক মামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঘোষণামূলক মামলা কি এবং কখন দায়ের করা যায়
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মামলার বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। ৪২ ধারায় দায়েরকৃত ঘোষণামূলক মামলায় যে ডিক্রী প্রদান করা হয় তাকে ঘোষণামূলক ডিক্রী বলে । কোন ব্যক্তি ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করে তার আইনগত পরিচয় বা চরিত্র অথবা সম্পত্তির স্বত্ব রক্ষা করতে পারেন। ৪২ ধারার ঘোষনামুলক মোকদ্দমায় সাথে আনুসঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া বাধ্যতামূলক। যদি আনুসঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া না হয় তাহলে কোন প্রতিকার প্রদান করবেন না।
কেন ঘোষণামূলক মামলা করবেন
কোন ব্যক্তির আইনগত পরিচয় রক্ষা এবং পদের অধিকারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন। যেমন কোন ব্যক্তি কোন পদের অধিকারী। যদি অন্য কোন ব্যক্তি তাকে বেআইনীভাবে পদচ্যুত করে তাহলে পদচ্যুত ব্যক্তি ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করে তার পদ ফিরে পেতে পারেন। তাছাড়াও কোন সম্পত্তিতে সম্পত্তির মালিকের অধিকার নিরবিচ্ছিন্ন এবং নির্বিঘ্ন করার জন্য ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন।
- উদাহরণ–১ : আব্দুল্লাহ আইনত একটি নির্দিষ্ট জমির দখলে আছে। ইশতেয়াক সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা সেই জমিতে যাতায়াতের অধিকার দাবি করেন। আব্দুল্লাহ একটি ঘোষণামূলক মামলা করে এটি দাবি করতে পারেন যে ইশতেয়াক সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা সেই জমিতে যাতায়াতের অধিকারের অধিকারী নয় ৷
- উদাহরণ–২: রহিম আইনত একটি পুকরের দখলে আছে। করিম অভিযোগ করে যে তিনি সেই পুকুরের মালিক এবং তার কাছে এই পুকরটির দখল হস্তান্তর করতে বলেন। রহিম একটি ঘোষণামূলক মামলা করে এই পুকরটির দখল ধরে রাখার অধিকারের ঘোষণা পেতে পারে।
- উদাহরণ–৩: রফিক সাহেব কে বেআইনী ভাবে তার চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়। রফিক সাহেব বেআইনী বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে চাকুরীতে থাকার অধিকার জন্য ঘোষণামূলক মামলা করতে পারেন।
ঘোষণামূলক মামলা সিদ্ধান্ত আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা
ঘোষণামূলক মামলা সিদ্ধান্ত আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। আদালত তার সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা ব্যবহার করে কোন বিষয় ঘোষণা প্রদান করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। অর্থাৎ ঘোষণামূলক প্রতিকার প্রদানে আদালতকে আইন দ্বারা বাধ্য করা যায়না। তবে আদালত এই ক্ষমতা তার নিজের খেয়াল খুশিমত প্রয়োগ করতে পারেন না। পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আদালতকে কিছু নীতি মেনে চলতে হয়। ঘোষণামূলক প্রতিকার আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী আদালতের সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা সুষম, যুক্তিযুক্ত এবং বিচারিক কার্যাবলীর মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হতে হবে। তবে আদালতের এই ইচ্ছাধীন বা সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা অবশ্যই স্বেচ্ছাচারীতামূলক হবে না বরং ন্যায় বিচার সহায়ক হবে।
ঘোষণামুলক ডিক্রী পাওয়ার শর্তাবলী
- বাদীর কোন সম্পত্তিতে স্বত্ব বা আইনগত পরিচয় থাকতে হবে।
- স্বত্বের অধিকার আইন থেকে সৃষ্টি হতে হবে ।
- বিবাদী সম্পত্তির অধিকার দাবী করবেন।
- যে ক্ষেত্রে বাদী শুধু মাত্র তার সত্তের ঘোষণা ছাড়া অন্য কোন প্রকার চাইতে পারতেন বাদীকে তা চাইতে হবে ।
ঘোষণামূলক মামলায় আনুষঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মামলার সাথে আনুষঙ্গিক প্রতিকার প্রার্থনা করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোন মামলার মূল প্রতিকারের সাথে অন্যান্য প্রতিকার চাওয়াকে আনুষঙ্গিক প্রতিকার বলে। প্রধান কোন প্রতিকারের সহগামী প্রতিকার হলো আনুষঙ্গিক প্রতিকার। যেমন স্বত্ব ঘোষণার মামলায় স্বত্ব ঘোষণার সাথে সাথে দখল উদ্ধার এর প্রার্থনা চাওয়া যায় । সম্পত্তিতে স্বত্ব আছে এই মর্মে স্বত্ব ঘোষণা চাওয়া মূল প্রতিকার এবং সাথে দখল উদ্ধার এর প্রার্থনা চাওয়া হলো আনুষঙ্গিক প্রতিকার। বাদী যখন সম্পত্তির দখলে থাকবে না তখন বাদীকে আনুষঙ্গিক প্রতিকার হিসেবে দখল উদ্ধারের প্রার্থনাও করতে হবে।
- যে সকল ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়ঃ নিম্ন লিখিত বিষয় সহ অনেক ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। এর মধ্যে কিছু গুরুত্ব পূর্ন বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ
- বিবাহ বিষয়ঃ বিবাহ বিষয়ে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। বাদী এবং বিবাদী স্বামী এবং স্ত্রী কিনা এই মর্মেও ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায়। বাদী বিবাদীকে বিবাহ করেছেন কিনা বা তালাক প্রদান করেছে কি না এই মর্মে দেওয়ানী আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। যেমনঃ- শাজাহান মমতাজকে বিবাহ করেনি এই মর্মে শাজাহান ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারেন। কারণ ইহা শাজাহানের আইনগত চরিত্রকে প্রভাবিত করে
- ট্রেডমার্ক বিষয়ঃ ট্রেডমার্ক বিষয়ে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। কোন ব্যক্তির ট্রেডমার্ক ব্যবহারে হস্তক্ষেপ করলে,তা তার আইনগত অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হবে। তখন তিনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুসারে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবেন।
- ধর্মীয় অধিকার বিষয়ঃ ধর্মীয় অধিকার বিষয়ে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। ধর্মীয় কাজ বা নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার একটি আইনগত অধিকার। যদি কেউ ধর্মীয় অধিকারে পালনে বাধা প্রদান করে তাহলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুসারে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায়। ধর্মীয় কাজে হস্তক্ষেপ করা হতে বিরত রাখার জন্য ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায়।
- যে সকল ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মামলা করা যায় নাঃ নিম্ন লিখিত বিষয় সহ অনেক ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক মামলা করা যায় না । এর মধ্যে কিছু গুরুত্ব পূর্ন বিষয় উল্লেখ করা হলোঃ
- সরকারী চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ঃ সরকারী চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মামলা করা যায় না । ১৯৮০ সালের প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল আইন কার্যকর হওয়ার পর সরকারী ও বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে ৪২ ধারা অনুসারে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায় না। ১৯৮০ সালের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইন এর ৪ ধারায় সরকারী ও বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে বিচার করার একচেটিয়া ক্ষমতা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালকে প্রদান করা হয়েছে।
- অর্থ সংক্রান্ত বিষয়েঃ অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণামূলক মামলা করা যায় না । বাদী যদি বিবাদীর নিকট হতে টাকা পাওয়ার অধিকারী হয় তাহলে বাদী টাকা পাওয়ার অধিকারী মর্মে ঘোষণা দাবী করতে পারেন না। অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে Money Suit মামলা করতে হয় ।
মামলার তামাদিঃ
সাধারণত ঘোষণামূলক মামলা ৬ বছরের মধ্যে দায়ের করতে হয়। তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ঘোষণামূলক মামলার প্রকৃত কারণ উদ্ভব হওয়ার সময় হতে ৬ বছরের মধ্যে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হবে।
মামলার কোর্ট ফিঃ
সাধারণত ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হবে। কিন্তু আনুষঙ্গিক প্রতিকারসহ ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।
সিএলপি কর্তৃক আইনী সেবা
সিএলপি একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার এখানে ব্যারিস্টারস ও আইনজীবীর মাধ্যমে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-ই-মেইল: info@counselslaw.com ফোন: +8801700920980 +8801947470606, ঠিকানা: জামিলা ভি লা, ফ্ল্যাটঃ সি-২, বাসা-৪/এ/১ (তৃতীয় তল), রোড-০২, গুলশান ১, ঢাকা-১২১২।