মুসলিম আইন অনুযায়ী তালাক প্রদানের পদ্ধতি, বাংলাদেশে কীভাবে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে হয় এই সম্পর্কে আইনজীবীদের প্রায় প্রশ্ন করায়। এছাড়াও, বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের পদ্ধতির খরচ এবং সময় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায় । এই নিবন্ধটিতে বাংলাদেশেমুসলিম বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতির সবচেয়ে সহজ উপায়ে আলোচনা করা হবে।
মুসলিম আইনে তালাকের প্রকারভেদ-
মুসলিম শরিয়াহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ মোতাবেক তালাক দুই প্রকার । আবার, মুসলিম মুল আইন অনুযায়ী, তালাকের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রযোজ্য আইনের আলোকে ২ (দুই) প্রকারের তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে । যথা-
১) নোটিশ দ্বারা তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদ ।
২) পারস্পারিক / সম্মতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ।
নিচে দুই ধরনের তালাকের ধারনা দেওয়া হলঃ
নোটিশ দ্বারা তালাক-
নোটিশ দ্বারা বিবাহবিচ্ছেদ একতরফা বিবাহবিচ্ছেদ হিসাবেও পরিচিত। নোটিশের মাধ্যমে ডিভোর্স বা তালাক দিতে, ডিভোর্স নোটিশ প্রাপকের সম্মতি বাধ্যতামূলক নয় । এই ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষের মধ্যে তালাক দেওয়ার সম্মতি নাও থাকতে পারে।
পারস্পরিক / সম্মতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ-
পারস্পরিক / সম্মতিত্রমে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, উভয় পক্ষেরই তালাক দিতে তাদের সম্মতি রয়েছে। যেহেতু উভয় পক্ষ বিবাহবিচ্ছেদের বিষয়ে সচেতন তাই নোটিশের প্রয়োজনীয়তা বাধ্যতামূলক নয়।
বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতিঃ
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৭ অনুযায়ী, যখন একজন ব্যক্তি একতরফা তালাক দেয়, তখন সে নিম্নরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করেঃ
১) নোটিশ পদ্ধতি ছারা একতরফা তালাক-
- স্বামী বাস্ত্রী যেই তালাক দিক না কেন তাকে অন্য পক্ষকে এবং সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা চেয়ারম্যানকে তালাকের নোটিশ দিতে হবে।
- তালাক প্রদানকারী ব্যক্তিকে বিবাহ নিবন্ধকের নোটিশ এবং বইতে তার বুড়ো আঙুলের ছাপ দিতে হবে এবং স্বাক্ষর করতে হবে।
- বিবাহ নিবন্ধকের বইয়ের নোটিশে ২ (দুই) জন পুরুষ সাক্ষী স্বাক্ষর করবেন।
- নোটিশ নিবন্ধিত পোস্ট মাধ্যমে পাঠানো হবে ।
- নোটিশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয় পরপর ৩ (তিন) মাসে স্থামী-স্ত্রীকে ৩ (তিন)টি নোটিশ জারি করবে।
- সিটি কর্পোরেশন স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ নিরসনের জন্য একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবে ।
- কোন পক্ষ উপস্থিত না হলে বা সমাধান করা সম্ভব না হলে সিটি কর্পোরেশন একটি আদেশ পত্র জারি করবে ।
- বিবাহ নিবন্ধক একটি বিবাহবিচ্ছেদ সনদপত্র জারি করবেন ।
২) পারস্পরিক / সম্মতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ-
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ধারা ৮ অনুযায়ী, যখন একজন ব্যক্তি পারস্পরিক বিবাহবিচ্ছেদ দেয়, তখন সে নিম্নরূপ মেনে চলে-
- সাধারনত, স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়।
- বিবাহ নিবন্ধকের খাতায় স্বামী-স্ত্রী এবং ২ (দুই) জন সাক্ষী স্বাক্ষর করেন।
- সাধারণত, বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে আসার আগে, উভয় পক্ষ তাদের নির্ধারিত শর্তাবলীতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
- পক্ষগুলি বেশিরভাগই যৌতুকের টাকা, স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ (যদি থাকে) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।
- যেহেতু দুইপক্ষ একে অপরের সিদ্ধান্ত জানে এবং সেখানে যদি সমাধানের কম সম্ভাবনা থাকে তাহলে নোটিশের প্রয়োজন নেই।
গর্ভাবস্থায় বিবাহ বিচ্ছেদের পদ্ধতিঃ
তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলে, নোটিশের তারিখ থেকে ৯০ দিন বা গর্ভাবস্থা, যেটি পরে হবে, তার নির্ধারিত সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
বিবাহবিচ্ছেদ প্রত্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিসুলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজনীয়:
১. কাবিননামার ফটোকপি ।
২. স্বামী এবং স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় নম্বরপত্রের অনুলিপি।
৩. দুইজন পুরুষ সাক্ষীর জাতীয় পরিচয় নম্বরপত্রের ফটোকপি ।
৪. ০১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি যদি কোনো আইনজীবী দ্বারা কোনো হলফনামা প্রস্তুত করা হয়।
বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্রের জন্য সরকারী খরচ:
বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ (রেজি) বিধি, ১৯৭৫ অনুযায়ী-
একজন নিকাহ বা বিবাহ নিবন্ধক বিবাহবিচ্ছেদের নিবন্ধনের জন্য ২০০ টাকা (দুইশত) ফি চার্জ করবেন । বিবাহ নিবন্ধক ২৫ টাকা কমিশন ফি
ছিসেবে এবং ০১ (এক) টাকা প্রতি কিলোমিটার হিসেবে ভ্রমণ খরচ হিসাবে দাবি করতে পারেন । কিন্তু বর্তমানে একজন বিবাহ নিবন্ধক প্রকৃত খরচের চেয়ে বহুগুণ বেশি খরচ দাবি করে থাকেন।
বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতির ত্রুটির জন্য শাস্তি 8
তালাকের উপরোক্ত পদ্ধতি লঙ্ঘন করলে, একজন ব্যক্তি ০১ (এক) বছর মেয়াদের জন্য সাধারণ কারাদন্ডে বা ১০ (দশ হাজার টাকা) পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দ্ভিত হতে পারেন।
অতএব, ইসলাম তালাককে উৎসাহিত না করলেও ইসলাম সাংসারিক জীবনে হিত্তা ও অশান্তিকর পরিস্থিতিকেও প্রশ্রয় দেয়না । মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একবার বলেছিলেন, “সমস্ত হালাল জিনিসের মধ্যে, তালাক আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ।”
কুরআনে আল্লাহপাক আরও বলেছেন: “পক্ষদয় হয় ন্যায়সঙ্গত শর্তে একত্রিত হবে অথবা সদয়ভাবে পৃথক হবে।” (সূরা বাকারা, ২:২২৯) ।
এইজন্য, তালাকের উল্লেখ পবিত্র কোরআনে আছে। বর্তমানে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে, বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের সঠিক পদ্ধতি সকলের জানা উচিত