হেবা কাকে বলে?
কোন একজন মুসলিম অন্য কোন একজন মুসলমানকে কোন প্রকার বিনিময় ব্যাতিত সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে হেবা বলে। দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়। হেবার মাধ্যমে একজন সম্পত্তির মালিক তার ওয়ারিশদের বা অন্য কাউকে সম্পত্তি হস্তান্তর করতেপারেন। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন- ১৮৮২ অনুযায়ী কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিস্বেচ্ছায় কোনো বিনিময় ব্যাতিত অন্য কার কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করে দেওয়াকে হেবা বলে।
হেবার প্রকারভেদ সমূহঃ
সাধারন হেবাঃ
যে হেবায় আদৌ কোন প্রকার প্রতিদান নেই এবং সম্পত্তির দাতা অবিলম্বে তার দানকৃতসম্পত্তি গ্রহিতার কাছে হস্তান্তর করেন।
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজঃ
হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ হলো সম্পত্তির মূল্যের পরিশধের বিনিময়ে হেবা। হেবা বা দানের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ ব্যতিক্রম । প্রকৃ্ত পক্ষে এটি বিক্রয়ের সমতুল্য । এতে ক্রয় চুক্তির যাবতীয় উপাদান বিদ্যমান থাকে। হেবা-বিল-অ্যাওয়াজর বিনিময়ের পর্যাপ্ততা সম্পর্কে মুসলিম জুরিস্টদের মত হলো বিনিময়ে প্রাপ্ত মূল্যের মান প্রদত্ত সম্পত্তির সাথে সঙ্গে তুলনামূলক ভাবে কম হলেও অ্যাওয়াজটি বে-আইনি হবে না। এমনকি বিনিময় মূল্যে যদি একটি পবিত্র কোরআন কিংবা জায়নামাজ ও একটি ‘তসবিহ’ হয় তবুও এটা হেবা-বিল- অ্যাওয়াজ জন্য উত্তম বিনিময় মূল্যে। তবে হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ এর মান যাই হোক না কেন ,কার্যত এটি পরিশোধ করতে হবে । এই হেবাকে বৈধ করতে হলে দুটি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে।
১। দান গ্রহিতা কর্তৃক হেবা-বিল-অ্যাওয়াজ এর বিনিময় মূল্যে প্রকৃ্ত অর্থেয় দিতে হবে ।
২। দাতার মালিকানা পরিত্যাগকরত দান করার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে হবে।
হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ
আরেক রকম হেবা আছে, যাকে হেবা বা শর্ত-উল এওয়াজ বলা হয়। কোন একজন মুসলিমঅন্য কোন একজন মুসলমানকে কোন প্রকার বিনিময় প্রদানের শর্তযুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করাকে হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ বলে। হেবা বা শর্ত-উল-এওয়াজ মূলত দান। এটা সম্পাদন হওয়ার জন্য দখল হস্তান্তর আবশ্যক। বিনিময় প্রদানের পূর্বে হেবা বা শর্ত-উল এওয়াজ বাতিলও করা যায়।
হেবা বৈধতার আবশ্যকীয় শর্তাবলীঃ
কোন হেবা আইনানুগ হতে হলে অবশ্যই সেখানে তিনটি শর্ত পূরন করতে হবে
- হেবার ঘোষনা বা প্রস্তাব।
- দান গ্রহীতা কতৃক হেবা গ্রহন।
- দাতা কতৃক হেবা গ্রহীতাকে হেবার বিষয় বস্তুর দখল প্রদান।
যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা করা যেতে পারে:
রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং অনুসারে হেবার ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে মুসলিমরা যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে হেবা করা যেতে পারে তা নিম্নরূপঃ
- সহোদর ভাই-বোন।
- পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়েকে ।
- স্বামী-স্ত্রী এর মধ্যে।
- দাদা/দাদী-নাতী/নাতনীকে।
- নানা/নানী-নাতী/নাতনী এই কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা
যায়।
অন্য ধর্মাবলম্বীগনের ক্ষেত্রে হেবাঃ
একজন মুসলমান ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক অন্য একজন মুসলমানকে শুধুমাত্র হেবা করতে পারে। কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। অন্য ধর্মাবলম্বীগন চাইলে রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বিবি) নং অনুসারে যে সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে দানের ঘোষণা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন তা নিম্নরূপঃ
- সহোদর ভাই-বোন।
- পিতা/মাতা-ছেলে/মেয়েকে ।
- স্বামী-স্ত্রী এর মধ।
- দাদা/দাদী-নাতী/নাতনীকে।
- নানা/নানী-নাতী/নাতনী এই কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর করা
যায়।
হেবা কখন বাতিল করা যায়ঃ
দখল হস্তান্তরের পূর্বে হেবা বাতিল করা যায়। কিছু ক্ষত্রে দখল হস্তান্তরের পরও হেবা বাতিল করা যায় । এক্ষেত্রে কোর্টের ডিক্রি বা আদেশের প্রয়োজন। নিম্নলিখিত যে ক্ষত্রে হেবা বাতিল করা যায়।
- স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে।
- দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে বিবাহের অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে।
- গ্রহিতা মৃত্যুবরণ করলে।
- হেবার পূর্বে হেবাকৃত সম্পত্তি দাতা কর্তৃক অন্য কোথাও হস্তান্তর হয়ে থাকলে।
- হেবাকৃত সম্পত্তি হারিয়ে গেলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে।
- যে কোন কারণেই হোক, যখন হেবাকৃত বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
- যখন হেবার বস্তুটি এমনভাবে রূপান্তর হবে যে এর আসল আকৃতি শনাক্তযোগ্য থাকবে না, যেমনঃ- যখন গম পিষানোর পর আটার রূপান্তরিত হয়।
হেবা দলিল বাতিল:
যদি একজন দাতা মনে করেন যে হেবাটি অকার্যকর এবং বাতিলযোগ্য তাহলে তিনি হেবাবাতিল করতে পারবেন । এক্ষেত্রে কোর্টের ডিক্রি বা আদেশের প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট-প্রতিকার আইনের ১৮৭৭ এর ৩৯ ধারা অনুযায়ী হেবা দলিল বাতিলের জন্য কোর্টে আবেদনকরলে আদালত কর্তৃক বাতিলের আদেশ হতে পারেন।
রেজিস্ট্রেশন
মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা লিখিত এবং রেজিস্ট্রেশনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু lex loci actus বা law of the land হিসেবে ২০০৫ সালে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ১২৩ ধারা এবং একই সালে রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ১৭ ধারা সংশোধনের ফলে সম্পত্তির হেবা রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ।
হেবা/দানের ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রেশন ফিস
হেবা দলিল এবং বিক্রয় দলিল উভয়ই বাংলাদেশের আইন অনুসারে নিবন্ধিত হওয়া প্রয়োজন। বিক্রয় দলিলের নিবন্ধন ফি সম্পত্তির পরিমান ও মূল্যের উপর নির্ভর করে। হেবা দলিল এর ক্ষেত্রে সম্পত্তির পরিমান ও মূল্য যতই হোক না কেন এর ফিস পরবর্তন হয় না। হেবা দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
ফিসের খাত টাকা
১। রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ টাকা
২। স্ট্যাম্প শুল্ক ২০০ টাকা
৩। ই ফি ১০০ টাকা
৪। এন ফি ১৬০ টাকা (১০ পৃষ্ঠা হিসাবে)
৫। এনএন ফি ২৪০ টাকা (১০ পৃষ্ঠা হিসাবে)
৮। হলফনামা স্ট্যাম্প ২০০ টাকা
৯। কোর্ট ফি ১০ টাকা
মোট খরচ ১,০১০ টাকা
সিএলপি কর্তৃক আইনী সেবা:
সিএলপি একটি সনামধন্য ‘ল’ চেম্বার যেখানে ব্যারিস্টারস , আইনজীবীর মাধ্যমে হেবা সহ অন্য সকল বিষয়ে আইনগত সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কোন প্রশ্ন বা আইনী সহায়তার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ-ই-মেইল:info@counselslaw.com ফোন: +8801700920980 +8801947470606, ঠিকানা: জামিলা ভিলা, ফ্ল্যাটঃ সি-২, বাসা-৪/এ/১ (তৃতীয় তল), রোড-০২, গুলশান ১, ঢাকা-
১২১২।